বর্তমান দিনে আমরা সবাই স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটার ব্যবহার করি, আর তার সাথে অতি গুরুত্বপূর্ণ গেজেট ইয়ারফোন ব্যাবহার করে থাকি। এটার মাদ্ধমে খুব সহজে আমরা গান শুনতে পারি, কথা বলতে পারি এবং অডিও বুক শুনতে পারি, তার সাথে আরো অনেক ধরনের কাজেই আমরা এটা ইউজ করে করে থাকি।
টেকনোলজির উন্নতির কারণে, মানুষের চাহিদার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরেনর ইয়ারফোন উদ্ভাবিত হয়েছে। আজকে এই পোস্টে আমি বিভিন্ন ধরণের ইয়ারফোন সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো যাতে আপনি আপনার জন্য সেরা ইয়ারফোনটি খুঁজে বের করতে পারেন।
সাধারণত মার্কেটে দুই ধরনের ইয়ারফোনের খুঁজে পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে তারযুক্ত অন্যটি তারবিহীন। দুইধরনের ইয়ারফোন একই রকম কাজ করে থাকে তবে এদের গঠন আলাদা।
তারযুক্ত ইয়ারফোন:
তারযুক্ত ইয়ারফোনগুলো সরাসরি ডিভাইস থেকে তারের মাদ্ধমে কানে শব্দ ডেলিভারি করে। এগুলোকে আমরা বেসিক ইয়ারফোন বলে থাকি।
যেহেতু এগুলো সরাসরি ডিভাইসের সাথে কানেক্ট করা থাকে তাই এগুলো ব্যবহারের জন্য কোনো প্রকার ব্যাটারি লাগাতে হয়না। তাই প্রয়োজনে যেকোনো সময় ব্যাবহার করা যায়।
অন্যদিকে এই ইয়ারফোন গুলোর সাউন্ড কোয়ালিটি অন্য যেকোনো ধরণের ইয়ারফোনের থেকে সেরা সাউন্ড কোয়ালিটি প্রদান করে থাকে। তাই যারা সত্যিই বেষ্ট কোয়ালিটির গান শুনতে চান তাদের জন্য এই ক্যাটাগরির পারফেক্ট হবে।
সুবিধাসমূহ :
- উচ্চমানের সাউন্ড কোয়ালিটি প্রদান করে।
- কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম তুলনামূলক কম।
- সহজেই ডিভাইসের সাথে কানেক্ট করে ব্যবহার করা যায়।
- ব্যাটারির প্রয়োজন হয়না।
- মোটামুটি সবধরণের ডিভাইসের সাথে এটিকে কানেক্ট করা যায়।
- রিয়েল টাইম অডিও শুনতে পাওয়া যায়।
অসুবিধাসমূহ:
- খুব সহজেই তারের ইয়ারফোন জট পাকিয়ে যায়, যা বিরক্তিকর হতে পারে।
- সরাসরি তারের মাধ্যমে ডিভাইসের সাথে কানেক্ট থাকার কারণে নড়াচড়া করা যায় না।
- সহজেই তার ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নিউজলেটারের জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
Serachoice এর স্বাধীন রিভিউ, এক্সপার্ট সুপারিশ এবং মূল্য ছাড় অফার গুলো সরাসরি আপনার ইনবক্সে পেতে সাইন আপ বাটনে ক্লিক করুন।
কিভাবে আমরা আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করি এবং কিভাবে আমাদের মার্কেটিং ইমেইল গুলো পাওয়া বন্ধ করতে পারেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের গোপনীয়তা নীতি দেখুন। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে, যে কোন সময় আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না।
তারবিহীন ইয়ারফোন:
বাংলাদেশে এই ইয়ারফোন গুলো মূলত ব্লুটুথ ইয়ারফোন হিসেবে পরিচিত। কোনো প্রকার ক্যাবল কানেকশন ছাড়াই এই ডিভাইস গুলো আপনার মোবাইল, টেবলেট কিংবা ল্যাপটপের সাথে ওয়ারলেসলি কনেনেক্ট হতে পারে।
আর যেহেতু এই টাইপের ডিভাইস গুলো কোনো প্রকার তারের কানেকশন ছাড়াই ব্যবহার করা যায় তাই আপনি যেকোনো পরিস্থিতিতে এটিকে গান শুনতে, মোবাইলে কথা বলতে অথবা অডিওবুক শুনতে ব্যবহার করতে পারবেন।
তারবিহীন ইয়ারফোন গুলো বিশেষ কিছু ফিচার যেমন টাচ কন্ট্রোল, ইনবিল্ট মাইক্রোফোন কথা বলার জন্য এবং কম্পেক্ট ডিজাইনের কারণে এগুলো ব্যবহার সহজ করে তুলেছে। আর তাই এইধরেন সুবিধার কারণে তারবিহীন ইয়ারফোন গুলো বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে দিনদিন জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।
সুবিধাসমূহ:
- তার না থাকায় খুব সহজে ব্যবহার করা যায়।
- ব্যবহারে খুবই আরামদায়ক।
- সহজেই নড়াচড়া করা যায়।
- দেখতে অনেক স্টাইলিশ
- বিল্টইন মাইক্রোফোন থাকায় কথা বলা যায়।
অসুবিধাসমূহ:
- ব্যাটারি থাকায় চার্জ দিতে হয়।
- আকারে ছোট হওয়ার কারণে
- সহজেই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- দাম বেশি
- তুলনামূলক অডিও কোয়ালিটি কম।
বিশেষ কিছু ফীচার এবং এবং গঠনের উপর ভিত্তি করে কয়েক ধরণের ইয়ারফোন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ইন-ইয়ার ইয়ারফোন:
বাংলাদেশে সর্বাধিক ব্যৱহৃত ইয়ারফোন গুলো হচ্ছে ইন-ইয়ার ইয়ারফোন। সরাসরি কানের ভিতরে ফিট হওয়ার কারণের এই ধরণের ইয়ারফোন গুলো ব্যাহবার করা সহজ। আকারে ছোট হওয়ার কারণে যেকোনো জায়গায় খুব সহজে বহন করা যায়। নয়েজ আইসোলেশন প্রযুক্তির কারণে এই এয়ারফোন গুলো যেকোনো ধরণের অতি শব্দ যুক্ত এলাকায় খুব সহজে ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে এই এগুলো দামের তুলনায় খুব ভালোমানের সাউন্ড কোয়ালিটি প্রদান করতে পারে।
সুবিধাসমূহ:
- আকারে ছোট এবং হালকা হওয়ায় সহজে বহন করা যায়।
- কানে পুরোপুরি ফিট হওয়ার কারণে বাইরের অপ্রোজনীয় সব বাধা দিতে পারে।
- দেখতে স্টাইলিশএবং আকারে ছোট হওয়ায় দূর থেকে দেখা যায় না।
- ভালো বেজ প্রদান করতে পারে।
- দৈনন্দিন কাজে সহজেই ব্যবহার করা যায়।
অসুবিধাসমূহ:
দীর্ঘ সময় ব্যবহারে কানে ব্যথা হতে পারে।- বাইরের শব্দ গুলো শুনতে পাওয়া যায় না।
- নিয়মিত কান আবদ্ধ থাকার কারণে ইনফেকশন হতে পারে।
- বাইরের শব্দ থেকে প্রায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে, পথে চলন্ত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
ওভার-ইয়ার হেডফোন বা ইয়ারফোন:
এই ধরণের ইয়ারফোন গুলো আকারে বড় হওয়ার কারণের সরাসরি কানের উপরে ফিট হয়ে থাকে। বড় হওয়ার কারণে এবং যাতে খুব সহজে কানে ফিট হয়ে থাকতে পারে এতে হেড ব্যান্ড ইউজ করা হয়। এগুলো বেবহার করা তুলনামূলক আরামদায়ক এবং কানে চাপ অনুভত কম হয়।
সুবিধাসমূহ:
- আরামদায়ক এবং কানে ভালোভাবে ফিট হয়।
- বাইরের শব্দগুলোকে খুব ভালোভাবে ব্লক করতে পারে।
- বড়ো সাইজের ড্রাইভ ব্যবহারের কারণে ভালো অডিও প্রদান করতে পারে।
- ব্যাটারি বড়ো হওয়ার কারণে দীর্গ সময় ব্যবহার করা যায়।
অসুবিধাসমূহ:
- বড়ো আকারের কারণে সহজে বহন করা যায় না।
- বড়ো আকারের কারণে দূর থেকে লক্ষণীয়।
- কারন পুরোপুরি আবদ্দ থাকার কারণে কানে ঘাম হতে পারে।
নয়েজ ক্যানসেলিং ইয়ারফোন:
নয়েজ ক্যানসেলিং ইয়ারফোনে একটি উন্নত ধরণের প্রযুক্তি যা খুব সহজে বাহিরের অপ্রোজনীয় শব্দ গুলোকে ব্লক করতে পারে এবং একটি তুলনামূলক নীরব পরিবেশে শুনতে সাহায্য করে। আপনি কোলাহল পূর্ণ কোনো পরিবেশ অথবা গাড়িতে যাতায়াত এর সময় বাইরের শব্দ গুলোকে কমিয়ে দেয় যা আপনাকে কোনোপ্রকার যামেলা ছাড়াই ব্যবহার করতে সাহায্য করে।
সুবিধাসমূহ:
- বাইরের অপ্রোজনী শব্দগুলোকে ব্লক করতে পারে।
- সাউন্ড কোয়ালিটি উন্নত করতে পারে।
- কাজ কিংবা পড়াশোনার সময় আপনাকে ফোকাসড থাকতে সাহায্য করে।
- যাতায়াতের সময় এই ধরণের এয়ারফোনগুলো খুবি ইউজফুল।
অসুবিধাসমূহ:
- দাম তুলনামূলক বেশি।
- নয়েজ কেনসেলিং প্রযুক্তির জন্য ব্যাটারির প্রয়োজন হয়।
- অনেক প্রয়োজনীয় শব্দ শুনতে বাধা দেয়।
বন কন্ডাকশন ইয়ারফোন:
এই ধরণের ইয়ারফোন গুলো একটু ভিন্নধর্মী স্পেশ্যাল হয়ে থাকে যা সরাসরি কানের মদ্ধদিয়ে সাউন্ড না পাঠিয়ে মাথার খুলির হাড়ের মাদ্ধমে সরাসরি আমাদের কানের ভিতরের অংশে শব্দ প্রেরণ করে থাকে।
এইধরেন ইয়ারফোন গুলো সরাসরি আমাদের চারপাশের শব্দগুলোকে ব্লক না করে, ভাইব্রেশন টেকনোলজির মাদ্ধমে আমাদের কানের ভিতরে অংশে শব্দ প্রেরণ করে।
যারা ইয়ারফোন ব্যবহার করার পাশাপাশি চারপাশে কি হচ্ছে তা শুনতে চান তাদের জন্য একটা খুবই উপকারী এবং দীর্ঘ সময় ব্যবহারে কানের ভিতরে কোনো প্রেশার পরে না।
সুবিধাসমূহ:
- কান খোলা থাকার কারণে সহজেই বাইরের শব্দ গুলো শুনতে পাওয়া যায়।
- যারা কানে কম শুনতে পান তাদের জন্য এটা খুবই উপকারী।
- দীর্ঘ সময় ব্যবহারে এটা খুবই আরামদায়ক।
.
অসবিধাসমূহ:
- সাধারণ ইয়ারফোন থেকে এগুলোর সাউন্ড কোয়ালিটি তুলনামূলক ভালো না।
- ভালোমানের বেজ প্রদান করতে পারে না।
- অন্যান্য ইয়ারফোন এর তুলনায় দাম বেশি।
উপসংহার:
তাই অবশ্যই প্রয়োজন এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে একটি ইয়ারফোন পছন্দ করতে হবে। আপনি ব্যায়ামের সময় ব্যবহার করবেন নাকি রাস্তায় চলাচলের সময় অথবা মুভি এনজয় করার জন্য বা গান শুনতে তা আপনাকেই নির্ধারণ করে কিনতে হবে। টেকনোলজির উন্নতির কারণে দিনদিন ইয়ারফোনে অনেক পরিবতর্ন হচ্ছে। তারই ক্রয় করার পূর্বে অবশ্যইদেখে শুনে তারপর কিনুন।