বর্তমান এই ক্রমবর্ধমান পৃথিবীতে, মোবাইল ফোনের পাশাপাশি ইয়ারফোন আমাদের জীবন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখনি আমরা কোথও যাত্রা করি, কাজ করি বা একটু রিলাক্সেশন এর প্রয়োজন হয় তখই এই ছোট্ট ডিভাইসটি আমাদের পছন্দদের গান শুনতে অথবা মুভি দেখতে সাহায্য করে। তবে যদি আমরা দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের পছন্দের ডিভাইসটিকে অযত্নে ব্যবহার করি তবে খুব দ্রুত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই আর্টিকেল আমি আপনাদের কিছু টিপস দেয়ার চেষ্টা করবো যাতে আপনার এয়ারফোনটি নতুনের মতোই সবসময় ব্যবহার করতে পারেন।
১. যত্নের সাথে ব্যবহার:
আপনার প্রিয় ইয়ারফোনটিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রথম এবং সবচেয়ে মৌলিক পরামর্শ হলো যত্ন সহকারে ব্যবহার করা। অপ্রোজনীয় ঝাঁকানো পরিহার করুন এতে ইয়ারফোনের অভ্যন্তরীন পার্টস গুলো ক্ষতির সম্মুক্ষিন হতে পারে। যখন আপনি ইয়ারফোনটিকে মোবাইল অথবা অন্যকোনো ডিভাইস থেকে খুলতে যাবেন তখন ক্যাবল ধরে টানাটানি না করে প্লাগ বা জ্যাকটি ধরে খুলুন। তার পেঁচিয়ে গেলে অবশ্যই যত্নসহকারে জটলা খুলতে হবে অন্যথায় ক্যাবল বা সংযোগ স্থানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২. নিয়মিত পরিষ্কার করা:
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আপনার ইয়ারফোনের আয়ু বৃদ্ধির অন্যতম চাবিকাঠি। দীর্ঘ সময় ব্যবহারে আমাদের কানে উৎপন্ন হওয়া মোম অথবা খোল গুলো ইয়ারফোনের গ্রিলে জমা হতে থাকবে। এতে করে পূর্বের তুলনায় কম সাউন্ড শোনা যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য নিয়মিত ইয়ারফোনের গ্রিলগুলো নরম ও শুকনা ব্রাশ অথবা টুথ পিক দিয়ে পরিষ্কার করুন। খেয়াল রাখবেন পরিষ্কারের সময় ময়লাগুলো যাতে আরো ভিতরের দিকে ঢুকে না যায়। আরো ভালোভাবে পরিষ্কার করার জন্য পরিষ্কারক এলকোহল ব্যবহার করতে পারেন।
৩. সঠিক জায়গায় রাখুন:
ব্যবহারের পর আমরা ইয়ারফোনটিকে সঠিক জায়গায় রাখি না কিন্তু এই অভ্যাস দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী রাখতে সাহায্য করে। ব্যবহার শেষে অবশ্যই এটিকে নির্দিষ্ট কেস বা পাউসে সংরক্ষণ করুন, এটি সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে। অন্যদিকে এটি ইয়ারফোনের তার পেঁচিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকেও রক্ষা করবে।
৪. অতিরিক্ত তাপমাত্রা এড়িয়ে চলুন:
হোক সেটা গরম কিংবা ঠান্ডা, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ইয়ারফোনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে যা কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি সূর্যের আলোতে, গাড়ির ইঞ্জিনের পাশে বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পরিবেশ থেকে দূরে রাখুন। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ইয়ারফোনের বিভিন্ন অংশ গুলোকে নষ্ট করতে পারে অন্যদিকে অতিরিক্ত ঠান্ডা কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাই অবশ্যই এটিকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে যাতে করে দীর্ঘ সময় ভালো থাকে।
৫. অতিরিক্ত ভলিউম এড়িয়ে চলুন:
দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত ভলিউমে গান বা পডকাস্ট শুনলে এটি শুধুমাত্র আপনার কানের ক্ষতি করবে না সাথে ইয়ারফোনের ড্রাইভারের ক্ষতি করবে। তাই কান এবং এয়ারফোন উভয়ের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সবসময় মিডিয়াম ভলিউমে শুনুন। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করলে, মাঝে মাঝে বিরতি নিন এতে করে আপনার ইয়ারফোন এবং কানের বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ হবে।
৬. নিয়মিত ক্যাবল চেক করুন:
এয়ারফোনের সবচেয়ে দুর্বল অংশ হচ্ছে ক্যাবল। সাজেই এটি ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের সকলেরই এমন অভিজ্ঞতা আছে। তাই নিয়মিত ভাবে ক্যাবল পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি কোনো সমস্যা পাওয়া যায় তবে বড়ো কোনো ক্ষতি হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় বেবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্থ স্থান বৈদ্যুতিক টেপ দিয়ে মেরামত করতে হবে। যদি অতিরিক্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে তবে প্রয়োজনে তার পরিবর্তনের বেবস্থা করতে পারেন।
৭. সঠিক ইয়ার টিপস সিলেক্ট করুন:
সঠিক ইয়ার টিপস নির্বাচন করলে শুধুমাত্র ব্যবহারে আরামদায়ক হয় না বরং নয়েজ আইসোলেশন বৃদ্ধি করে। বেশিরভাগ ইয়ারফোন একের অধিক ইয়ার টিপস থাকে। যেটা ভালোভাবে ফিট হবে ঐটাই সিলেক্ট করতে হবে। অন্যদিকে সঠিক ইয়ার টিপস সিলেক্ট করতে পারলে ব্যবহারের সময় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
8 .আদ্রতা থেকে রক্ষা করুন:
ইয়ারফোন নষ্ট হওয়ার আরো একটি বড়ো কারণ হচ্ছে আদ্রতা। যদি আপনার ইয়ারফোনটি ওয়াটার রেজিস্টেন্স না হয়ে থাকে তবে সেটাকে অতিরিক্ত আদ্রতা থেকে দূরে রাখুন। ব্যায়ামের সময় বা হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি অসতর্কতাবশত এমনটা হয়ে যায়, তবে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন এবং বাতাসে শুখানোর সময় দিন। সাথে সাথে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
উপসংহার:
আপনার প্রিয় ইয়ারফোনটিকে রক্ষনাবেক্ষনের জন্য উন্নত টেকনিক্যাল স্কিলের দরকার নেই। সাধারণ কিছু অভ্যাস পালন করলে দীর্ঘদিন ইয়ারফোনটি নতুনের মতোই থাকবে। তাই আপনি যদি যত্ন সহকারে ব্যবহার করেন, নিয়মিত পরিষ্কার করেন, সঠিক জায়গায় রাখেন এবং এই সহজ টিপস পালন করেন তবে আপনার ইয়ারফোনটি দীর্ঘদিন টেকসই হবে। আপনার প্রিয় গানটি নতুনের মতোই উপভোগ পারবেন।