বর্তমান সময়ে রান্নাঘরের অন্যতম সঙ্গী হয়ে উঠেছে মাইক্রোওয়েভ। মাইক্রোওয়েভের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। বহিবিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের দেশেও মাইক্রোওয়েভের চাহিদা বাড়ছে। ঝটপট রান্না জন্য মাইক্রোওয়েভের জুড়ি নেই। খাবার গরম করার ঝামেলা এড়াতে প্রায়শই আমরা মাইক্রোওয়েভের দ্বারস্ত হই।
তাছাড়া কনকনে ঠান্ডায় সকলেই চাহিদা থাকে গরম গরম খাবার। তখন শহুরে লোকজনের ভরসার জায়গা মাইক্রোওয়েভ। শুধু কি তাই! কেক, পুডিং থেকে ফিশ বা চিকেন গ্রীলসহ বাহারি রকমের মুখরোচক রান্নায় মাইক্রোওয়েভের তুলনা নেই। কিন্তু সময় বাঁচতে গিয়ে আর ঝামেলা এড়াতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মাইক্রোওয়েভের ব্যবহার আদৌও কোনো ক্ষতির কারণ কিনা, সেটা কি ভেবেছি? আজ আমরা আলোচনা করবো মাইক্রোওয়েভের ভালো-খারাপ দিকগুলো নিয়ে।
মাইক্রোওয়েভের ভালো দিকসমূহ
আজকাল মাইক্রোওয়েভের ব্যবহার বাড়ছে। এক বোতাম প্রেস করলেই আপনি খাবার গরম করতে পারছেন আবার বিভিন্ন পদের খাবারও তৈরি করতে পারছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক মাইক্রোওয়েভের
১.ডিফ্রস্ট করার ক্ষমতা
মাইক্রোওয়েভ ওভেন ডিফ্রস্টিংয়ের জন্য দুর্দান্ত কাজ করে। ফ্রিজিং খাবার দ্রুত সময়ে বরফ গলানোর জন্য মাইক্রোওয়েভ উপযোগী। এই পদ্ধতিটিতে খাবারের বরফ দ্রুত গলে যায় এবং খাদ্যজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি কমায়। এতে করে ডিফ্রস্ট প্রক্রিয়ার সময় ব্যাকটেরিয়া মারা যেতে পারে।
২.সময় সাশ্রয়ী
মাইক্রোওয়েভ আপনার স্মার্ট রান্নাঘরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। রান্না এবং খাবার তৈরির জন্য মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল এটি সময় বাঁচায়। তাছাড়া খাবারের মানও ঠিক রাখে। কারণ স্বাভাবিকভাবে চুলায় রান্নার চেয়ে মাইক্রোওয়েভে তুলনামূলক কম সময় লাগে। আপনি কয়েক মিনিটের মধ্যে খাবার প্রস্তুত করতে পারেন। যারা কর্মব্যস্ত তাদের জন্য এটি আদর্শ পদ্ধতি কারণ তাদের রান্নাঘরে ঘন্টা কাটানোর সময় নেই।
৩. পুষ্টিমান ঠিক রাখে
মাইক্রোওয়েভে খাবার রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ সংরক্ষণ করা যায়। কারণ এর রান্নার প্রক্রিয়া দ্রুত। অর্থাৎ খাবারটি দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসে না। ফলস্বরূপ, পুষ্টিগুলি আরও ভালভাবে সংরক্ষণ করা হয়, যা খাদ্যকে স্বাস্থ্যকর এবং আরও পুষ্টিকর করে তোলে।
৪.এনার্জি সেভ করে
মাইক্রোওয়েভে তুলনামূলক কম শক্তির প্রয়োজন হয়। খাবার তৈরির জন্য মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে আপনার কারেন্ট বিলের অর্থ সাশ্রয় করতে পারেন। তাছাড়া অটোমেটিক অন/অফ সুইচ রয়েছে এবং কোন খাবার কত টেম্পারেচারে ও টাইমে রান্না হবে তার জন্য সুইচ রয়েছে। ফলে তা অটো অফ হয়ে যায়। আর অতিরিক্ত এনার্জি খরচ হয় না।
৫. সহজে পরিষ্কার করা
মাইক্রোওয়েভের আরও একটি সুবিধা হলো এটি পরিষ্কার করা সহজ। গ্যাস ক্লিন করতে আপনাকে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হয় তাছাড়া রান্নার পাত্র পরিষ্কার করাও ঝামেলার। কিন্তু মাইক্রোওয়েভ ক্লিন করতে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে পরিষ্কার কাপড়ের টুকরা। যা দিয়ে আপনি এটি মুছে ফেলতে পারবেন খুব সহজে। মাইক্রোওয়েভ ওভেন শুধুমাত্র খাবার গরম করে কিন্তু পাত্র নয় এবং এটি খাবারকে পাত্রের চারপাশে আটকে রাখে না। যার ফলে খাবার পোড়ায় না ও পাত্রের গায়ে লেগে যায় না, এজন্য এর পাত্র পরিষ্কার করা সহজ হয়।
Sign up for our newsletter
Get SeraChoice independent reviews, expert advice, and intensively researched deals sent straight to your inbox.
For information about our privacy practices, including how to opt out of marketing emails, see our Privacy Policy. For general questions, contact us anytime.
মাইক্রোওয়েভের ক্ষতিকর দিকসমূহ
কর্মব্যস্ত জীবনে মাইক্রোওয়েভ আপনার সময় বাঁচায় ঠিকই তবে নিয়মিত এটির ব্যবহার যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বয়ে আনে, এই বিষয়টিও তেমনি বাদ দেওয়া যাবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক মাইক্রোওয়েভের
১.প্লাস্টিকের পাত্র
মাইক্রোওয়েভে কোন পাত্রে খাবার গরম করছেন সেটা জেনে নেওয়া অবশ্যই জরুরি। অনেকেই হরহামেশাই প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার গরম করেন যা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। অনেক ফুডগ্রেড প্লাস্টিক কনটেইনারে ওভেন সেফ লেখা থাকলেও তাতে খাবার গরম করা অনুচিত। কারণ প্লাস্টিকে থাকা প্যাথালেটস নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করলে খাবারের সাথে মিশে যায়। এই রাসায়নিক পদার্থ শরীরে প্রবেশ করলে ইনসুলিন রেসিসট্যান্স, বন্ধ্যাত্ব, হরমোনের সমস্যা কিংবা অ্যাজমার মতো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ওভেন প্রুফ কাঁচ বা সিরামিকের পাত্র ব্যবহার করুন।
২. ব্যাকটেরিয়ার অনুপ্রবেশ
মাইক্রোওয়েভের অন্যতম একটি অসুবিধা হলো এর চারিদিকে সমানভাবে তাপ পৌঁছাতে পারে না। ফলে খাবার গরম করার সময় খাবারে থাকা ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণ নির্মুল হতে পারে না। ফলে তা শরীরে অনুপ্রবেশ করে নানা জটিলতার সৃষ্টি করে।
৩. রেডিয়েশন
মাইক্রোওয়েভ ওভেন যদি ড্যামেজ হয়, তবে মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই রেডিয়েশন খাবারে মিশে গেলে মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে এবং তা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
৪. ফুড পয়জেনিং
রান্না করা একই খাবার মাইক্রোওয়েভে বারবার গরম করা ঠিক নয়। একই খাবার বারবার গরম করলে ফুড পয়জেনিং, ডায়রিয়া, বমি হতে পারে।
উপসংহার
বর্তমান কর্মব্যস্ত শহুরে জীবনে মাইক্রোওয়েভ নিঃসন্দেহে একটি প্রয়োজনীয় উপাদান, যা জীবনকে আরও সহজ করেছে। কিন্তু এর ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে এর ক্ষতির দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। মাইক্রোওয়েভের সুবিধা গ্রহণ করে অসুবিধার বিষয়ে আমাদের সর্তক থাকতে হবে। তাই কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করলেই খুব সহজে ক্ষতির দিকগুলো এড়িয়ে মাইক্রোওয়েভের সুবিধা গুলো উপভোগ করতে পারেন।