সভ্যতার সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষ হয়ে পড়ছে কর্মব্যস্ত। আর এই ব্যস্তময় জীবনকে সহজ করে তুলছে প্রযুক্তি। সংসারের বিভিন্ন বিষয়কে সহজতর করতে তাই প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। আর প্রযুক্তির এক বিষ্ময়কর আবিষ্কার হলো রেফ্রিজেরেটর। এই সুবাদেই আপনি নিয়মিত বাজার করার ঝামেলাটাও এড়াতে পারেন।
অনেকেই আবার একসাথে অনেক বাজার করে চিন্তায় পড়ে যান, ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংস অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে তো! মাছ-মাংস কত দিন রাখা যাবে ফ্রিজে! আদৌও কতদিন ভালো থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই জানেন না। আজ জেনে নিন এসব চিন্তার সমাধান।
মাছ-মাংস ফ্রিজে কতদিন রাখা উচিত?
কর্মব্যস্ত নগরীর সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রামীণ জীবনেও ফ্রিজের প্রভাব বাড়ছে। কারণ প্রতিদিন বাজার করার ঝামেলা কেউই পোহাতে চায় না। বাজারে গেলেই সবার আগে আমাদের চোখ যায় মাছ-মাংসের দিকে। আর যদি হয় মাসের শুরু, তবে তো কথায় নেই।
কিন্তু একসাথে অনেকটা মাছ-মাংস কিনেই কপালে পড়ে যায় চিন্তার ভাঁজ। আবার অনেকেই কোরবানি মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন দিনের পর দিন। কিন্তু অনেকেই ঠিকঠাক জানেন না মাছ-মাংস কাঁচা অবস্থায় ঠিক কতদিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায়। অনেকেই জানেন না দীর্ঘদিন সংরক্ষণে আসলেই কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কিনা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, কাঁচা মাছ-মাংস ফ্রিজে অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। কাঁচা অবস্থায় থাকলে তা নষ্ট হয় না বটে কিন্তু এর স্বাদ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য ফ্রিজে বেশি দিন না রাখার পরামর্শ তাদের।
মাছ-মাংস সংরক্ষণের জন্য মিনিমাম একটি তাপমাত্রা প্রয়োজন। এটি হলো শূণ্য ডিগ্রি ফারেনহাইট। এই তাপমাত্রায় মাছ-মাংস অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনা ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে যে, যেকোনো খাদ্যদ্রব্য শূণ্য ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় সংরক্ষিত করা হলে তা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত খাওয়ার উপযোগী থাকে। কিন্তু খাওয়ার উপযোগী আর স্বাদ বিষয় দুটির মধ্য রয়েছে ব্যাপক ফারাক।
মাছ-মাংস বাজার থেকে আনার পর ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে পানি ঝরিয়ে নিন। কারণ মাছের ফুলকা ও কানকো ও কাঁচা মাংস হলো ব্যাকটেরিয়ার ঘাঁটি। এগুলো ভালো করে না ধুলে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে৷ যা কোল্ড টেম্পারেচারেও বংশবৃদ্ধি করে মাছ-মাংস নষ্ট করে দেয়।
এরপর তাজা মাছ-মাংস অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল ব্যাগ বা পলি ব্যাগে মুড়িয়ে ফ্রিজে রাখলে অনেকদিন ভালো থাকবে। এছাড়া সবচেয়ে ভালো থাকে এয়ারটাইট যুক্ত ফুডকন্টেইনারে খাবার সংরক্ষণ করলে।
তবে একসাথে অনেক মাছ-মাংস রাখলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য অল্প অল্প করে সংরক্ষণ করতে হবে। অনেকেই একসাথে অনেক মাছ বা মাংস রেখে দেন। রান্নার সময় অনেকক্ষণ বাহিরে রেখে বরফ গলিয়ে বাকিটুকু ফ্রিজে রেখে দেন। এটি একদমই করা উচিত নয়। কারণ এতে করে ব্যাকটেরিয়া নতুন ভাবে সংক্রমণের সুযোগ পায়।
এজন্য দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত প্রোটিনজাত খাবার বিশেষ করে মাছ-মাংস ফ্রিজে রেখে খাওয়া মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব খাবারে দ্রুত ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে ফলে পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়।
আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা মাছ-মাংস খেলে অনেকসময় ফুড ইনফেকশন ও পয়জনিং দেখা দিতে পারে। এছাড়া ডায়রিয়া, বমি, এসিডিটিসহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।
Sign up for our newsletter
Get SeraChoice independent reviews, expert advice, and intensively researched deals sent straight to your inbox.
For information about our privacy practices, including how to opt out of marketing emails, see our Privacy Policy. For general questions, contact us anytime.
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক ফ্রিজে কতদিন কাঁচা মাছ-মাংস রাখলে তা ভালো থাকবে এবং খাওয়ার জন্য উপযোগী থাকবে-
মাছ সংরক্ষণের সময়কাল
মাছ কতদিন ভালো থাকবে তা সাধারণত নির্ভর করে মাছের ধরনের উপর। যেমন-
- বিভিন্ন ধরনের চর্বিযুক্ত মাছ যেমন- টুনা মাছ, স্যালমন মাছ ,পাঙ্গাশ মাছ কাঁচা অবস্থায় ফ্রিজে দুই থেকে তিন মাস সংরক্ষণ করা যায়।
- এছাড়া দেশী মাছ ছয় থেকে আট মাস ফ্রিজে ভালো থাকে।
- আবার বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ যেমন- লইট্টা, ছুরি ইত্যাদি চার থেকে আট মাস ফ্রিজে রাখা যায়।
- ডীপ ফ্রিজে চিংড়ি মাছ ছয় থেকে আঠারো মাস রাখা যায়।
মাংস সংরক্ষণের সময়কাল
ফ্রিজে সংরক্ষিত মাংসের ফ্রেশনেসও নির্ভর করে এর ধরণের উপর। যেমন-
- ব্রয়লার মুরগী, টার্কি মুরগী বা কবুতরের মাংস ডীপ ফ্রিজে সাধারণত নয় মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু সময় যত দীর্ঘায়িত হবে এর স্বাদের তারতম্য ঘটবে এটিই স্বাভাবিক।
- রেড মিট ফ্রিজে প্রায় এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকবে।
- অনেকেই মাংসের কিমা ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন। এটি তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
- সসেজ ভালো থাকে ১-২ মাস।
উপসংহার
ঝামেলা নিরাময়ের জন্য ফ্রিজ নিঃসন্দেহে একটি সহজ সমাধান। কিন্তু আমরা ফ্রিজের উপর আজকাল এতটায় নির্ভর হয়ে পড়েছি যে তা আশীর্বাদের বদৌলতে অনেকসময় হুমকী হয়ে যাচ্ছে। তাই ফ্রিজে দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা মাছ-মাংস রেখে খাওয়া মোটেই উচিত নয়। যা আমাদের জন্য হয়ে উঠছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়।